‘সুপার ফুড’ রসুনঃ নিয়মিত কেন খাবেন, কেন খাবেন-না

সূচনা ঃ সুপার ফুড রসুন

রান্নাঘরে রসুন পাওয়া যায় না এমন রান্নাঘর হাতে গোনা। রসুনের এই ব্যাপক ব্যবহার রান্নার স্বাদ বৃদ্ধি ও নানাবিধ পুষ্টিগুনের কারণে সৃষ্টি হয়েছে।রসুনের ভেষজ গুণও উল্লেখযোগ্য। তাইতো রসুন ‘সুপার ফুড’-এর অন্তর্ভূক্ত। রান্নাকরা রসুনের চেয়ে কাঁচা রসুন উপকারী। প্রাচীনকাল হতে মশলা হিসেবে রসুনের ব্যবহার অতি জনপ্রিয়। 




প্রাচীন মিশরে প্রায় ৫০০০ বছর আগে শ্রমিকদের রসুন খাওয়ানো হতো তাদের শক্তি বৃদ্ধির জন্য। তবে প্রতিটি জিনিসের মতই সুপার ফুড রসুনের যেমন উপকারিতা রয়েছে, তেমনি এর কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। তাই এটি কখন খাওয়া যাবে, কখন খাওয়া যাবে না-সেটি জানা প্রয়োজন।এসব নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। 


পেজ সূচীপত্র

রসুনে যা রয়েছ 

প্রতি ১০০ গ্রাম (সাধারণ খাওয়ার পরিমাণ ৩-৫ গ্রাম) কাঁচা রসুনে ১৪৯ কিলোক্যালরী শক্তি রয়েছে শর্করা ৩৩ গ্রাম, চিনি ১ গ্রাম, খাদ্য আঁশ ২.১ গ্রাম, ফ্যাট ০.৫ গ্রাম, প্রোটিন ৬,৩৬ গ্রাম রয়েছে।ওষুধি গুণসম্পন্ন রসুনে শক্তি কম থাকলেও স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক। কারণ এতে সামান্য পরিমাণ ফ্যাট, প্রোটিন থাকলেও বিভিন্ন ধরণের ভিটামিন রয়েছে। ভিটামিনের মধ্যে রয়েছে বি১ (থায়ামিন), বি২ (রিবোফ্লাবিন), বি৩ (নায়াসিন), বি৫ (প্যান্টোথেনিক এসিড), বি৬, বি৯ (ফেলেট), ভিটামিন-সি। এছাড়াও রয়েছে ক্যালসিয়াম, পাটসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম ইত্যাদি খনিজ ও বিভিন্ন ধরণের এন্টিঅক্সিডেন্ট।তরে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ও তীব্র গন্ধযুক্ত যে উপাদান রয়েছে তার নাম হলো এ্যালিসিন। এটিই হলো রসুনের প্রধান ভেষজ উপাদান। রসুন কেন খাবেন উপরের আলোচনা হতে বোঝা যায়, ব্যাপক ভেষজ গুণসম্পন্ন হওয়ায় রসুন খাবার হিসেবে জনপ্রিয়। নিয়মিত রসুন খেলে কী কী উপকার পাওয়া যেতে পারে তার একটি বর্ণনা নীচে দেওয়া হলো।

রসুন কেনো খাবেন

• রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ রসুনের এন্টিব্যাকটেরিয়াল, এন্টিভাইরাল ও এন্টিফাঙ্গাল গুণ রয়েছে। এ’ কারণে শরীরকে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ফাঙ্গাল আক্রমণ হতে রক্ষা করে। এটি সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা রোগ প্রতিরোধে উপকারী। নিয়মিত রসুন গ্রহন রোগ প্র্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম। 
• হৃদরোধ প্রতিরোধে সহায়কঃ রসুন হৃৎপিন্ডের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত উপকারী। রসুন খেলে রক্তের কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড কমে।খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল (এইচডিএল) বাড়াতে সাহায্য করে।
 • উচ্চ রক্তচাপ কমায়ঃ রসুনে থাকা এ্যালিসিন রক্তনালী নমনীয় রাখতে সহাযতা করে। ফলে রক্তের স্বাভাবিক প্রবাহ নিশ্চিত হয়। উচ্চ রক্তচাপ কমে। 
• রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধ করেঃ রসুনের প্রাকৃতিক উপাদানে রক্ত পাতলা করার গুণাবলী রয়েছে। এটি রক্ত জমাট বাঁধতে বাঁধা দেয়। ফলে হার্ট এ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। 
• ফুসফুসের সংক্রমন রোধ করেঃ এ্যালার্জি বা ঠান্ডাজনিত কারনে ফুসফুসে সংক্রমন দেখা দেয়। কাঁচা রসুনের রস খেলে এ্যালার্জি বা ঠান্ডাজনিত ফুসফুসের সংক্রমন কমে।
 • ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করেঃ রসুনে থাকা এ্যালিসিন (সালফার যৌগ) পাকস্থরী, প্রোস্টেট, কোলোন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে বলে গবেষণায় পাওয়া গিয়েছে। 
• কোষের ক্ষয় রোধ করেঃ রসুনের এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান কোষের ক্ষয় রোধ করে নতুন কোষ সৃষ্টিতে সহায়তা করে। • যৌনক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়কঃ রসুনের এসলিল নামক এন্টিঅক্সিডেন্ট পুরুষের যৌনক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।জীবনীশক্তিও বৃদ্ধি করে। 
• মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করেঃ রসুনে থাকা বি৬ মানসিক চাপ, অন্দ্রিা, অশান্তি মুক্ত জীবন গড়তে করতে সহায়তা করে।
• রক্তে শর্করা কমায়ঃ রসুন ইনসুলিন নিঃসরণ কমিয়ে রক্তে শর্করার পরিমান কমাতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস রোগেদের জন্য এটি প্রাকৃতিক সহায়ক খাদ্য হতে পারে। (ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন সাপেক্ষে পরিমিত পরিমাণ খাওয়া যেতে পারে)। 
• ত্বক ও চুলের যত্নেঃ রসুনের সালফার যৌগ ত্বকের ব্রণ বা ইনফেকশন কমায়। এটি চুলের গোড়া মজবুত রাখতে সহায়তা করে। 
• হজমে সহায়কঃ রসুন হজমে সহায়তা করে। গ্যাস কমায়।এটি অন্ত্রের ক্ষতিকর জীবানু ধ্বংস করে ও উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি করে। 
• হাড়ের শক্তি বৃদ্ধি করেঃ নারীদের বয়স বৃদ্ধি পেলে হাড়ের শক্তি কমে যায়। রসুন গ্রহন করলে নারীদের শরীরের ইস্ট্রোজেনের মাত্রায় ভারসাম্য থাকে। ফলে হাড়ের সমস্যা কমে যায়। 

রসুন কেনো খাবেন-না বা পরিমিত খাবেন

• পেটের সমস্যাঃ মাত্রাতিরিক্ত রসুন খেলে সংবেদনশীল পাকস্থলীতে অস্বস্তির অনুভূতি হতে পারে। অনেকের রসুন খেলে গ্যাস, বমি-বমি ভাব, ডায়রিয়া হতে পারে। 
• রক্তপাতের ঝুঁকিঃ আগেই জেনেছি, রসুন রক্ত পাতলা করে। তাই আগে থেকেই যারা এ্যান্টিকুয়াগুল্যান্ট বা ব্লাড-থিনার জাতীয় ওষুধ (যেমন-এসপিরিনি, ক্লোপিডোগ্রেল ইত্যাদি) গ্রহন করছেন তাদের রসুন খাওয়া রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। 
 • নিম্ন রক্তচাপের সমস্যাঃ রসুন যেহেতু রক্তচাপ কমায়, সেহেতু যাদের নিম্ন রক্তচাপ রয়েছে তাদের রক্তচাপ আরও কমিয়ে দিতে পারে। ফলে তারা দুর্বরতা বা মাথা ঘোরার মত উপসর্গে ভুগতে পারেন। 
• সামাজিক প্রভাবঃ রসুনে থাকা এলিসিন মুখে বা ঘর্মগ্রন্থির মাধ্যমে দুর্গন্ধ ছড়াতে পারে। বিশেষ করে কাচা রসুন এই সমস্যা বেশী সৃষ্টি করতে পারে।তাই কর্মক্ষেত্রে বা সামাজিক অনুষ্ঠানে যাবার আগে রসুন না-খাওয়া ভালো। অবশ্য দুর্গন্ধ ঠেকাতে পেস্ট ব্যবহার করে দাঁত মাজা বা মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করা যেতে পারে। 
• অস্ত্রপচারের আগেঃ যে কোনো অস্ত্রপচারের পূর্বে রসুন খাওয়া বন্ধ রাখা উচিৎ। তাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ঝুঁকি কমবে। 
• গর্ভবস্থায় ও স্তন্যদানকালেঃ মহিলাদের গর্ভাবস্থায় ও স্তন্যদানকালে রসুন নিরাপদ নাও হতে পারে। গর্ভবস্থায় জটিলতা সৃষ্টি এবং যারা স্তন্য দান করেন তাদের বুকের দুধের স্বাদ পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে।   

পরিশেষ

এ’বিষয়টি এতক্ষণে প্রতীয়মান হয়েছে যে, রসুনকে কেনো সুপার ফুড হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। রতুন যেমন হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে, তেমনি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে রোগাক্রান্ত হওয়ার হাত হতে রক্ষা করে।তাই এ’কথা বলা যায় পরিমিত পরিমান রসুন নিয়মিত খাওয়া হলে এটি সবার দৈনন্দিন জীবনের জন্যে একটি উৎকৃষ্ট প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। পরিশেষে, নিয়মিত রসুন খান, সুস্থ থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

বহুবিধ.কম-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url